এই বৃষ্টির ভরা মৌসুমে মন চনমন করছিল নিত্যদিনের ডাল্ভাত আলা জীবন থেকে বেড়িয়ে একটু অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে। তাই চলে গেলাম নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে।

নাপিত্তাছড়া-বান্দরখুম নিয়ে হাইপের শেষ নেই, ৪৮০ থেকে শুরু করে ১৮০০ টাকার প্যাকেজ ইনফরমেশনেরও শেষ নেই। ইউটিউবের কথা তো আমি বাদই দিলাম। আমার লেখায়ও আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছাড়া নতুন করে অন্য কিছু বলবো না।
প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ কথা দিয়ে শুরু করব। 

পাহাড়ধসের তথ্য আমাদের কাছে নতুন কিছু না, প্রতিদিন কোথাও না কোথাও পাহাড়ধস হচ্ছে,, প্রতিদিন আমিও দুই চারজনের মারা যাওয়ার খবর দেখছিলাম, কিন্তু তারপরেও কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই চলে গিয়েছিলাম। 

কিন্তু যাওয়ার পর টের টা পেয়েছি। অসম্ভব সুন্দর ভরা যৌবনের ঝরণাও কিন্তু বৃষ্টির সময় ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। সুপ্তধারা ট্রেইলে ঢুকতে গিয়েও মাঝ পথে ফেরত চলে এসেছি কারণ আগের দিনের পাহাড়ধসের চিহ্ন তখনো বিরাজমান, অন্য অনেক গ্রুপ গেলেও আমাদের জীবনে আরো অনেক ঝরণা দেখার সৌভাগ্য হাতছাড়া করার রিস্ক আমরা নিতে পারিনি। ওয়েদার আপডেট মতে এখন পাহাড় ধসের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। 

নিউজমতে, বান্দরবান রেমাক্রি ঝুকিপূর্ণ ঘোষনা করা হয়েছে। বান্দরবান ঝুকিপূর্ণ তো চট্টগ্রাম তো না, এরকম লজিক আমি দিবনা। জেদ করে এতো রিস্ক নিয়ে নিজের ফিরে আসাটা সৌভাগ্য বলে মনে করি।

শুরু করেছিলাম ঢাকা-চট্টগ্রামগামী নন এসি বাসে করে। অন্ধকার নামা ভোরে নামলাম মিরসসরাই এর বড়টাকিয়া বাজারে। আলো ফুটতেই নাস্তা খেয়ে হিউম্যান হাল্ক গাইড রাজুকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম নাপিত্তাছড়ার উদ্দেশ্যে। হিউম্যান হাল্ক এইজন্য বললাম এই ১৫ বছরের বাচ্চা ছেলেটা আমাদের মত এত ভারি ভারি মানুষকে দুই থেকে তিনবার নির্ঘাত ইঞ্জুরি থেকে বাঁচিয়েছে। খৈয়াছড়া যাবার কথা থাকলেও গলা সমান পানি থাকার কারণে সেখানে যেতে পারিনি। তবে প্রথমে নাপিত্তাছরা এবং পরে বান্দরখুম ঝরণা দেখেই সমস্ত কষ্ট সার্থক হয়ে মন ভরে গেছে। আসার সময় মিরাসসরাই সদরে এসে পার্ক ইন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ+ডিনার করে সেখান থেকেই আবার ইউনিক এর নন এসি বাসে করে ঢাকায়। সব মিলিয়ে ১৬০০ টাকার মত খরচ করেছি আমরা।

ডিসক্লেইমার ঃ
১। বৃষ্টি থাকার দরুন ভিজতে না চাইলে রেইনকোর্ট মাস্ট। তবে রেইনকোর্ট পরে পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন।
২। যতটা সম্ভব ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অন্য কিছু না নিয়ে ব্যাগ হাল্কা রাখতে হবে। চকলেট বার,গ্লুকোজ, খাবার স্যালাইন থাকতে হবে। ব্যাগ অবশ্যই ওয়াটারপ্রুফ হতে হবে। এ্যাংলেট,ক্রেপ ব্যান্ডেজ, নি ক্যাপ, ফার্স্ট এইড কিট এগুলো থাকতে হবে প্রয়োজনমত।
৩। মোবাইল বা গ্যাজেট বৃষ্টি ও ঝরণার পানিতে ভিজে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। ডি এস এলার এই ওয়েদার এ নিয়ে গেলে অবশ্যই রেইন প্রোটেক্টেড কভার নিয়ে যাওয়া উচিত।
৪। ট্রেকিং এর জুতা মাস্ট। অবশ্যই ভালো গ্রিপ থাকতে হবে কারণ কাদায় আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। পাহাড়ে উঠার সময় অবশ্যই নাক নিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হবে, মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে কাহিল হয়ে পড়বেন।
৫। যারা সাঁতার জানেন না তারা একটু সাবধান, বৃষ্টির মধ্যে ঝরণার পানির স্রোত অনেক। যত বড় গ্রুপ নিয়ে যাবেন তত ভালো। লাইফ জ্যাকেট থাকলে ভালো। ওখানে সবাই বড় গ্রুপ নিয়ে যায়, নিজের গ্রুপের সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করবেন ভিড়ের মধ্যে
৬। অনেক মশা-মাছির উপদ্রব থেকে বাঁচতে ওডোমস নেওয়া মাস্ট।
.৭। এই মৌসুমে নাপিত্তাছড়া কোন বেসিক লেভেলের ট্রেকিং থাকেনা, অনেক হাটতে হবে, পাহাড়ের রাস্তার অবস্থাও ভালো না। একটু এদিক ওদিক হলেই একটা দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৮। নিজের লিমিট সম্পর্কে আইডিয়া রাখতে হবে, গ্রুপের সবার ক্ষমতার উপরেও সচেতন থাকতে হবে, আবেগের বশে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে আগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
ক্যামেরা ট্রাইপড নিয়েও গাইডের বাসায় রেখে আসতে হয়েছে। মোবাইলটা কোনরকমে বের করে ছোট্ট একটা ভিডিও করে এনেছি।মৌসুম ভালো হলে আবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

গাইডের নাম্বার : মোঃ রাজু 01865509358 (যাওয়ার একদিন আগে ইনফর্ম করুন)

হ্যাপি ট্রাভেলিং :)







Your travel partner