ঘুরে আসুন রাজশাহীর অন্যতম আকর্ষণ পুঠিয়া রাজবাড়ি (Puthia Rajbari)

Puthia Rajbari
Puthia Rajbari



রাজশাহী শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রাজবাড়ি, রাজবংশের অমর ইতিহাস অনেকেরই জানা। বাড়িটি বেশ প্রশস্ত এবং কারুকার্যময়। এতে আছে দরবার গৃহ, জলসা ঘর, প্রবেশদ্বার, দীঘি এবং অনেক স্মৃতিচিহ্ন। বর্তমান পুঠিয়া অতীতের লস্করপুর পরগনা নামে পরিচিত এক বিস্তৃত অঞ্চল ছিল।

পুঠিয়াতে যাওয়ার পর প্রথমেই যে মন্দিরটা দেখবেন সেটি প্রায় ৪০০ বছর পুরনো, যা মোগল আমলেই তৈরি। অত্যন্ত সুন্দর কারুকাজ দিয়ে গড়া এই মন্দির। আগে এইখানে পূজা হতো। আনি্ন মন্দিরের সঙ্গেই আরও দুটি মন্দির আছে, যার একটির নাম 'ছোট গবিন্দ মন্দির' আর অপরটির 'গোপাল মন্দির'। গোপাল মন্দিরের বয়স ২০০ বছরের মতো। একপাশে বিশাল বড় একটা দীঘি আর তার পাশেই এই মন্দিরগুলো।

দীঘির অন্যপাশে পুঠিয়া রাজবাড়ি। এই পুঠিয়া রাজবাড়ি যা এখন 'লস্করপুর ডিগ্রি কলেজ' হিসেবে পরিচিত। এ বিশাল রাজবাড়িটি তৈরি করেছিলেন 'রানী হেমন্তকুমারী দেবী' ১৮৯৫ সালে, তার শাশুড়ি 'মহারানী শরৎসুন্দরী দেবীর' সৌজন্যে।
বিশাল এ রাজবাড়ির সঙ্গে আরও একটি মন্দির আছে, যার নাম 'পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির'। এই মন্দিরে এখনো পূজা হয়। এই মন্দিরের ভেতর আর বাহিরের অত্যন্ত সুন্দর কারুকাজ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। পঞ্চরত্ন নামকরণে সম্ভবত এ মন্দিরের ৫টি সুউচ্চ গম্ভুজের ভূমিকা আছে বলে জানা যায়। শিবমন্দির যাওয়ার পথে রাজবাড়ির সামনের দিকে আরও একটা মন্দির আছে যার নাম 'ডোলা মন্দির'। এই মন্দিরটির নামকরণের কোন ইতিহাস জানা সম্ভব হয়নি।

পুকুরের পাশে শিবমন্দিরটির অবস্থান। চমৎকার কারুকার্যময় পুকুরঘাট পেছনে ফেলে দাঁড়িয়ে আছে মন্দিরটি। পাশেই মন্দিররক্ষক বিশ্বনাথ দাসের বাড়ি, মন্দিরের ভেতরটা দেখতে চাইলে তাকে ডাকলেই এসে খুলে দেবেন। জানা যায়, ৬৫ ফুট দীর্ঘ বেদির ওপর শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের দুই দিক দিয়েই সিঁড়ি আছে। চারদিকে বিশাল বারান্দা। বারান্দার দেয়ালের গায়ে হিন্দু পুরাণের নানা চিত্র। এর অনেক অংশ ভেঙে গেছে। তবে এখনো এখানে শিবপূজা হয় প্রতি বছর। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসে। চমৎকার গম্বুজশোভিত শিবমন্দির দর্শন শেষে কিছুটা পথ হেঁটে পুঠিয়া রাজবাড়ি চলে আসতে পারেন।

পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশাল মাঠ, রাজবাড়ি আর তার পেছনের দোলমঞ্চ দেখেও অবাক হয়ে যাবেন। পিরামিড আকৃতির দোলমঞ্চটি চমৎকার। দোলমঞ্চ ঘুরে দেখে রাজবাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। পাঁচআনি ও চারআনির রাজপ্রসাদ প্রায়ই কাছাকাছি। মাঝখানে রয়েছে দীঘি নাম শ্যামসাগর। দীঘিতে শানবাঁধানো প্রশস্ত সিঁড়ি আছে। একসময় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে এখানে সাত দিনব্যাপী মেলা বসত। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোক আসত এ মেলায়। সময়ের আবর্তে এখন অনেক কিছু বিস্মৃত স্মৃতি। পাঁচআনি জমিদার বাড়িতে রয়েছে গোবিন্দ মন্দির। মন্দিরটির গঠন শিল্প অত্যন্ত চমৎকার। মন্দিরের গায়ে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক চোখে পড়বে। শিবমন্দির দেখে বেলতলায় বসুন। আবার ফিরে যেতে ইচ্ছে হবে সেখানে। চারকোণে চারটি ও কেন্দ্রস্থলে একটি মোট পাঁচটি রত্ন দেখতে পাবেন। দেয়ালের ওপরে পৌরাণিক কাহিনীর চিত্র দেখে মনে অনেক প্রশ্ন জাগবে। এটি ১৮৩২ সালে পাঁচআনি জমিদার বাড়ির রানী ভুবনময়ী নির্মাণ করেছিলেন।

পুটিয়া থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে তারাপুর। এখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে গেলে দেখতে পাবেন দেড়শ' বছরের প্রাচীন দ্বিতল হাওয়াখানা। ৩০ একর আয়তনের একটি দীঘির মাঝে এটি নির্মাণ করা হয়। হাওয়াখানায় যাওয়ার জন্য সরুপথ রয়েছে। হাওয়াখানার নিচতলায় রয়েছে তিনটি কক্ষ, ওপরে দুটি কক্ষ এবং প্রশস্ত বারান্দা আছে। এখানে বাস করতেন জমিদার প্রমোদরঞ্জন লাহিড়ী। এখানে কিছুক্ষণ থাকলে মন ভরে যাবে। একা একাই কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের জগতে।

ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে রাজশাহী শহরের ৩০ মিনিট আগেই পুঠিয়া পাবেন। ঢাকার কলেজগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে বিভিন্ন কোম্পানির বাস যাওয়া-আসা করে। রাতে রাজশাহীতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি ভালোমানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।



COLLECTED 






Your travel partner We understand the power of simplicity and pain in complexity, which is why we have taken out complexity out of travel information and have simplified the whole travel info on Bdtripinfo for you.